ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি তা জানা আমদের আবশ্যক। কারণ বর্তমানে ঘরে ঘরে এই রোগীর অবস্থান। যদিও কয়েক বছর আগে এই রোগ ছিলো মানুষের মাঝে ভয়ংকর একটি রোগের নাম। কিন্তু বর্তমান সময় এই রোগটা এমন ভাবে মানুষের মধ্যে দেখা দিচ্ছে যা মানুষ শুনতে শুনতে এখন আর তেমন ভয় পায় না। আজকে আপনারা Diabetes এর লক্ষণ কি ও চিরতরে নিরাময় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এর জন্য আশা করি পুরোটা ভালো ভাবে মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) রোগ যা শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বা উৎপাদনে সমস্যার কারণে ঘটে। এটি মূলত রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে দেখা দেয়। Diabetes এমন একটি রোগ যা মানুষকে পুরো ঘড়ির সময়ের কাটার মতো করে তোলে দুনিয়ার সবকিছু একদিকে আর আপনার নিয়ম একদিকে। ডায়াবেটিস হলে আপনি পুরো রুল মেন্টেইন করে চলতে হবে। নিয়মের বাহিরে চলাফেরা করলেই আপনার Diabetes বাড়া বা কমার সুযোগ থাকে যা আপনার শরীরের জন্য ভালো নয়। ডায়াবেটিসের সাধারনত দুই ধরণ হয়ে থাকে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস:
- এটি অটোইমিউন সমস্যার কারণে হয়, যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) অগ্ন্যাশয়ের (প্যানক্রিয়াস) ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে।
- এটি সাধারণত শিশু বা তরুণ বয়সে শুরু হয়।
- ইনসুলিন ইনজেকশন ছাড়া এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস:
- এটি তখন হয় যখন শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, তবে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স)।
- এটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, তবে শিশুরাও অতিরিক্ত ওজন এবং অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে আক্রান্ত হতে পারে।
- জীবনধারার পরিবর্তন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ এবং প্রয়োজনে ইনসুলিনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস:
- এটি গর্ভাবস্থায় ঘটে এবং সাধারণত সন্তান জন্মের পর চলে যায়।
- তবে এটি ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আরও পড়ুন: Online Doctor । ডাক্তার দেখান ঘরে বসেই
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া (পিপাসা)।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
- অস্বাভাবিক ক্ষুধা লাগা।
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি হওয়া।
- ওজন কমে যাওয়া (টাইপ ১ ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়)।
- ক্ষত সেরে যেতে সময় লাগা।
ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে?
ডায়াবেটিে এমন একটি রোগ যা বর্তমানে এখনো নিরাময় করার মতো কোনো ঔষধ আবিস্কার হয় নাই তবে ভয় পাওয়ার কারণ নাই। তাই প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ হলো ডায়াবেটিসের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। নিয়ম ও ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ নিয়ে জীবন যাপন করলে Diabetes প্রতিরোধ করা যায়। যার একবার এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি নিয়ম মেনে জীবনের বাকি কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। নিয়ম মেনে চলাফেরা করলে কোনো ঝুকিপূর্ণ রোগ নয়। তবে যদি এর বিপরীতে চলেন তাহলে এর ভয়াবহতা অনেক অনেক ভয়ংকর হয়। নিচে টাইপ-১ ও টাইপ-২ চিরতরে নিরাময় হবে? সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস:
- এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি এই ধ্বংস হওয়া কোষ পুনরুদ্ধার করতে পারে না।
- গবেষণায় স্টেম সেল থেরাপি এবং বিটা সেল ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে কাজ চলছে, যা ভবিষ্যতে নতুন আশা জাগাতে পারে।
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস:
- রেমিশন: টাইপ ২ কিছু ক্ষেত্রে রেমিশনে যেতে পারে। অর্থাৎ, রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিক রাখতে পারলে ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কমে যেতে পারে। এটি বিশেষত জীবনধারা পরিবর্তন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সম্ভব।
- ওজন কমানো: বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ওজন কমানো টাইপ ২ নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই কার্যকর।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম: কম শর্করা, কম ক্যালোরি, এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
- কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি (ওজন কমানোর অপারেশন) টাইপ ২ Diabetes রেমিশনে সাহায্য করতে পারে।
এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে গবেষণা সফল হলে হয়তো চিরতরে নিরাময় সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: Emergency pill in bangladesh । ইমার্জেন্সি পিল কি ও কেনো খাবেন?
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কি
যেহেতু এই রোগ চিরতরে নিমূল করা এখনো সম্ভব নয় তাই এই রোগের প্রতিরোধ না করে বিপরীতে গেলে আপনি নানান ধরনের সমস্যায় ভোগতে পারেন। রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে যেমন: হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, স্নায়ুজনিত সমস্যা, চোখের সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি), এবং পায়ের সংক্রমণ বা গ্যাংগ্রিনের মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আসুন সবাই নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ কমানো ও প্রয়োজন হলে ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করে ডায়াবেটিস চিরতরে নিমূল না করা গেলেও চিরতরে স্বাভাবিক রাখা যায়।
কোনো রোগই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এই ছোট রোগই আপনার মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে। তাই ছোট বড় সব রোগই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে সঠিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন।