মেটফরমিন ট্যাবলেট কিসের ওষুধ, কেনো খাবেন? দাম ও প্বার্শপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
মেটফরমিন (Metformin) হলো মুলত টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধ।
এটি রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বাজারে এটি অনেক কোম্পানির অনেক নামে পাওয়া যায়, যেমন: Comet, Glucozid, Diabetmin, Glyciphage, Metforal ইত্যাদি।
এটি সাধারণত একা অথবা ইনসুলিন বা অন্য ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে একত্রে খাওয়ানো হয়।
এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী দেখা যায়। যার ফলে আমাদের অনেকে রই ডায়াবেটিসের অনেক ওষুধের নামগুলা জানা আছে।
মেটফরমিন ট্যাবলেট কিভাবে কাজ করে?
মেটফরমিন ট্যাবলেট মূলত ৩ভাবে কাজ করে থাকে। নিচে দেখানো হলো মেটফরমিন ট্যাবলেট এর কার্যক্রম।
- লিভারে গ্লুকোজ উৎপাদন কমায়
- পেশি ও কোষে ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়
- আন্ত্রিক কোষে গ্লুকোজ শোষণ ধীর করে দেয়
এই তিনটি কাজের মাধ্যমে এটি রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে টাইপ-২ ডায়বেটিস রোগীরা ভালো থাকেন।
মেটফরমিন ট্যাবলেট ডোজ ও খাওয়ার নিয়ম
ডোজ নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, ওজন ও ডায়াবেটিসের মাত্রার উপর এটা আশা করি আপনার জানেন।
তারপর ও সকল ওষুধের কিছু সাধারণ ডোজ থাকে,নিচে তা দেখানো হলো।
✅ সাধারণভাবে:
প্রাথমিক ডোজ: দিনে ৫০০ মি.গ্রা. (একবার বা দুইবার)
সর্বোচ্চ: দিনে ২০০০–২৫০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত (ডাক্তারের পরামর্শে)
📌 মেটফরমিন সাধারণত খাবারের পর খাওয়ানো হয়—যাতে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যা না হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মেটফরমিন তুলনামূলক নিরাপদ হলেও কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যদিও এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবার শরীরে দেখা যায় না।
- বমিভাব বা পেটব্যথা
- পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া
- মুখে ধাতব স্বাদ
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- খুব বেশি হলে ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিস (একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক সমস্যা)
👉 এসব সমস্যা সাধারণত শুরুতে হয় এবং সময়ের সাথে কমে যায়।
কারা খেতে পারবেন না?
সবাই মেটফরমিন খেতে পারবেন না ও কারা এই ওষুধ খেতে পারবেন। বিশেষ করে:
- যাদের কিডনি সমস্যা আছে
- যাদের লিভারের রোগ রয়েছে
- গর্ভবতী মা (ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া)
- যাদের অ্যালকোহলের অভ্যাস বেশি
- ১০ বছরের নিচে শিশু
এইসব ক্ষেত্রে ভুল করে খেলে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা হতে পারে।
কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা
একটি ওষুধ যেমন প্রাণ বাঁচাতে পারে তেমন প্রান নাশ করতে পারে। এজন্য আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে সর্তকতার সহিত ওষুধ সেবন করতে হবে।
বিশেষ করে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সকল প্রয়োজনীয় সতর্কতা থাকা জরুরী যেমন:
নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করে ডোজ ঠিকমতো ঠিক করতে হয়।
দীর্ঘমেয়াদে খেলে ভিটামিন B12 এর ঘাটতি হতে পারে, তাই মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা দরকার।
অতিরিক্ত খাওয়া বা ভুল করে একাধিক ডোজ খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
যদি কোনো অপারেশনের পরিকল্পনা থাকে, তাহলে ওষুধ বন্ধ রাখতে হতে পারে।
কিছু সাধারণ ভুল
ওষুধ খাওয়ার বিষয় নিয়ে আমাদের অনেক সাধারণ কিছু টুকিটাকি ভুল হয়ে থাকে প্রায়। যেগুলা অনেক সময় অনেক মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।
কাজেই আমাদের উচিত এই ছোটখাটো ভুলগুলো এড়িয়ে চলা। এগুলোর মধ্যে নিচে কয়েকটি সাধারণ ভুলগুলো তুলে ধরা হলো :
- ❌ “পেট খালি থাকলেও খেতে পারি”—না, এতে গ্যাস্ট্রিক বাড়তে পারে
- ❌ “রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক থাকলেই ছেড়ে দেব”—না, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করা উচিত না
- ❌ “খালি মিষ্টি খাব না, ওষুধ খাচ্ছি”—মেটফরমিন একা কাজ করবে না, ডায়েট ও এক্সারসাইজও দরকার
সর্বশেষ একটি কথা
মেটফরমিন হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এক পরীক্ষিত ওষুধ। তবে যেকোনো ওষুধের মতোই এর ব্যবহারেও সচেতনতা দরকার।
আপনিও যদিও এই তথ্য জানতে পেরেছেন তারপরও একজন রেজিস্ট্রার চিকিৎসক ছাড়া আপনার এটি সেবন করা মুঠেও উচিত নয়।
এবং আপনি যদি এটি রেগুলার সেবন করেন তাহলে ডোজ ঠিক রাখুন, নিয়ম মেনে খান, এবং প্রতি তিন মাস পর রক্ত পরীক্ষা করুন।
এতে ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে, শরীরও থাকবে সুস্থ। তারই পাশাপাশি রেজিস্ট্রার চিকিৎসক এর পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় করার জন্য আমাদের শেষ আর্টিকেল লেখা আছে আপনারা চাইলে সেটি থেকে ধারণা নিতে পারেন, যে কিভাবে ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় করা যায়? বিস্তারিত জানতে ক্লিক করতে পারেন……
বিঃদ্রঃ মেডিকেল ঘর কখনো কাউকে নিজ উদ্যোগে ওষুধ সেবন করার পরামর্শ প্রদান করে না,আমরা শুধু ওষুধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করে আপনাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি।
সকল ওষুধ সেবন করার পূর্বে একজন রেজিস্টার ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে সেবন করুন।