প্যারাসিটামল ট্যাবলেট: ব্যবহার, ডোজ ও সতর্কতা (বাংলায় সম্পূর্ণ গাইড)একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এই ওষুধ ট্যাবলেট চেনে না এমন মানুষ পৃথিবীতে নাই। এই ট্যাবলেট এতো পরিমাণে সেবন করা হয় যে এটি এখন পাবলিকে ওষুধ মনেই করে না।
সবকিছুর পরে মনে রাখতে হবে এটিও একটি ওষুধ, এটি যদিও নিরাপদ তবে অতিরিক্ত খেলে অনেক রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, কাজেই সাবধান হতে হবে।
নিচে উক্ত ট্যাবলেট এর যাবতীয় কার্যকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে, কাজেই মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্যারাসিটামল ট্যাবলেট: জ্বর ও ব্যথায় কেন খাওয়া হয়, কিভাবে খাবেন, সতর্কতা
প্যারাসিটামল (Paracetamol) এক ধরনের সাধারণ ব্যথানাশক ও জ্বর কমানোর ওষুধ। আমাদের দেশে এই ওষুধটি প্রায় প্রতিটি বাসায়ই থাকে।
হালকা জ্বর বা মাথাব্যথা হলে প্রথমেই যে নামটি মনে পড়ে, সেটি হলো প্যারাসিটামল।
অনেক জায়গায় একে “পেনাডল” নামেও চেনা যায়, যেটা আসলে এর একটি ব্র্যান্ড নাম মাত্র।
কখন এই ওষুধ খাওয়া হয়?
এই ওষুধটি সাধারণত নিচের সমস্যাগুলোতে খাওয়া হয়:
- সর্দি-জ্বর
- মাথাব্যথা
- শরীর ব্যথা
- দাঁত ব্যথা
- হালকা গাঁটের ব্যথা
- মাসিকের সময় পেটব্যথা
কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা বা ভাইরাল জ্বরে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই মানুষ প্যারাসিটামল খেয়ে থাকে, কারণ এটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং দ্রুত কাজ করে।
ডোজ নির্ভর করে বয়স, ওজন এবং রোগের উপর। তবে সাধারণভাবে:
✅ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য:
- প্রতি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর ৫০০ মি.গ্রা. থেকে ১ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে।
- দিনে মোট ৪ গ্রাম (৪০০০ মি.গ্রা.) এর বেশি না খাওয়াই ভালো।
✅ শিশুদের জন্য:
- শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী সঠিক ডোজ জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।
- সাধারণত ১৫ মি.গ্রা./কেজি হিসাবে হিসাব করা হয়।
📌 সবচেয়ে ভালো হয় প্যাকেটের লিফলেট পড়ে ডোজ বুঝে খেলে। কারণ বয়স ওজন বেধে সকল ওষুধেরই ডোজ পরিবর্তন হয়।
প্যারাসিটামল খাওয়ার নিয়ম
খাওয়ার আগে কিছু খেয়ে নেওয়াই ভালো, যদিও এটা পেটের জন্য বেশি ক্ষতিকর না।
পানি দিয়ে গিলে খেতে হয়, চিবানো উচিত নয়।
যদি ভুল করে ডোজ মিস হয়, পরবর্তী ডোজের সময় ডাবল না খাওয়া।
প্যারাসিটামল এর দাম (Price)
Paracetamol ট্যাবলেট, সিরাপ ও সাপোজিটরির দাম এক নজরে দেওয়া হলো,যদি বিভিন্ন দোকানে ২/৪ টাকা উঠানামা হতে পারে।
জ্বর, ঠান্ডা, মাথাব্যথা বা হালকা শরীর ব্যথার জন্য সবার পরিচিত নাম— প্যারাসিটামল।
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল পাওয়া যায় বিভিন্ন দামে। নিচে দেখুন ২০২৫ সালের আপডেটেড মূল্যতালিকা:
💊 প্যারাসিটামল ট্যাবলেট (500mg)
- Napa (Beximco) 500mg ৳৮ – ৳১০
- Ace (Square) 500mg ৳৮ – ৳১০
- Renova (ACI) 500mg ৳৯
- Parapyrol (Incepta) 500mg ৳৯
- Pyrex (Opsonin) 500mg ৳৯
🧃 প্যারাসিটামল সিরাপ (বাচ্চাদের জন্য)
- Napa Syrup 60ml (120mg/5ml) ৳১৮– ৳২৫
- Ace Syrup 60ml (120mg/5ml) ৳২০ – ৳২৫
- Renova Syrup 60ml ৳২২
💉 প্যারাসিটামল সাপোজিটরি (শিশুদের জন্য)
- Napa Suppository 125mg / 250mg ৳৮ – ৳১৫
- Ace Suppository 125mg / 250mg ৳৯ – ৳১৬
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects)
এই ওষুধ টি সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত খেলে অনেক সমস্যা হতে পারে। যদিও এটি একটি ওষুধ তাই হেলাফেলা করা যাবে না। নিচের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:
- লিভারের ক্ষতি (বিশেষ করে যারা আগে থেকেই লিভার রোগে ভুগছেন)
- চামড়ায় অ্যালার্জির মতো লালচে ফুসকুড়ি
- বিরল ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বা দুর্বল লাগতে পারে
- যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাদের জন্য প্যারাসিটামল বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।
কখন খাওয়া উচিত না?
- যদি লিভারের সমস্যা থাকে
- একসাথে অন্য পেইনকিলার খাওয়া হয়
- খুব বেশি ডোজে খাওয়ার প্রবণতা থাকে
- এছাড়াও গর্ভবতী মায়েরা বা যাদের ওষুধে অ্যালার্জি হয়, তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
কিছু সাধারণ ভুল
- ❌ “সর্দি-কাশি হলেই সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে” – এমন না
- ❌ “জ্বর নামছেই না, তাই বারবার খাচ্ছি” – এটা লিভারের জন্য ভয়ানক হতে পারে
- ❌ “একটা খেলাম, কাজ করছে না, তাই সাথে আরেকটা খেয়ে নিলাম” – মারাত্মক ভুল
পরিশেষে একটি কথা
এই ওষুধ খুবই সাধারণ এবং নিরাপদ একটি ওষুধ—ঠিক নিয়মে খাওয়া হলে।
তবে ছোটখাটো ভুল থেকেও বড় বিপদ হতে পারে। তাই যখন প্রয়োজন, তখনই খান, এবং ডোজ যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেটা মাথায় রাখুন।
আর অবশ্যই কোনো জটিলতা বা সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
Medical Ghor প্রতিনিয়ত সঠিক তথ্য দিয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আপনাদের যেকোনো মতামত আমাদের সাথে কমেন্ট করে শেয়ার করে দিতে পারেন।