সহবাসের কতদিন পর বমি হয়? জানুন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
যেহেতু সহবাসের কতদিন পর বমি হয় নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই তাই গড় মহিলাদের উপর পর্যবেক্ষণ করে একটি সম্ভাব্য তারিখ বলা যায়,
তবে এটি সকল নারীদের উপর সমান ভাবে কার্যকরী নয়। একেক নারীদের একে সময় হতে পারে আবার অনেকের সময় নাও হতে পারে।
তাই সহবাসের কতদিন পর বমি হয় এই অপেক্ষা করে যে গর্ভবতী হয়েছেন এবং তা নিশ্চিত হবেন তার কোনো সুযোগ নেই। তাই গর্ভবতী হয়েছেন কি না তা সঠিক ভাবে নিশ্চিত হতে
প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করে ঘরে বসেই নিজে নিজে টেস্ট করতে পারবেন। সাধারণত, বমি বা বমি ভাব (morning sickness) গর্ভধারণের ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায়।
- গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার আগে:
সহবাসের পর যদি ডিম্বাণু নিষেক ঘটে এবং গর্ভধারণ শুরু হয়, তবে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। - হরমোনাল পরিবর্তনের কারণ:
গর্ভধারণ শুরু হওয়ার পর শরীরে hCG (Human Chorionic Gonadotropin) নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এটি বমি বা বমি ভাবের প্রধান কারণ। - প্রাথমিক লক্ষণগুলোর সময়কাল:
- গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সহবাসের পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে শুরু হতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গর্ভধারণ পরীক্ষার প্রয়োজন।
- বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে বমি ভাব গর্ভধারণের ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
আরও পড়ুন: মাসিক বন্ধ হওয়ার কত দিন পর প্রেগনেন্সি বুঝা যায় জানতে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: ইমার্জেন্সী পিল কি? কেন খাবেন? জানতে ক্লিক করুন।
সহবাসের কতদিন পর বমি হয় কারণ কি (গর্ভধারণ ছাড়াও)
সহবাসের পর বমি বা অসুস্থতা সবসময় গর্ভধারণের কারণে হয় না। অন্যান্য কারণগুলিও থাকতে পারে, এরজন্যই আগেই বলেছি
যে সহবাসের কতদিন পর বমি হয় হওয়াই গর্ভবতীর লক্ষণ নয় তাই বমি হলেই আতংকিত হবেন না। বমি হওয়ার আরও কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- খাবারে বিষক্রিয়া:
সহবাসের সময় বা পরে খাওয়া কোনো খাবারের কারণে বমি হতে পারে। - মানসিক চাপ বা উদ্বেগ:
সহবাসের পরে মানসিক চাপ বা অস্বস্তি থেকেও বমি হতে পারে। - শারীরিক সমস্যা:
- পাকস্থলীর সমস্যা (গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি)।
- সংক্রমণ বা অন্য শারীরিক জটিলতা।
গর্ভধারণের অন্যান্য লক্ষণ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
সহবাসের কতদিন পর বমি হয় ছাড়াও গর্ভধারণের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ রয়েছে যা আপনার মধ্যে দেখা দিলে আপনি গর্ভবতী বলে ধরে নিতে পারবেন।
এই লক্ষণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি ভারো ভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণ কররে এই লক্ষণ গুলো আপনার মাঝে আছে কি না ধরতে পারবেন। গর্ভধারনের সর্বপ্রথম যে লক্ষণ গুলো হয় সেটি হচ্ছে :
- পিরিয়ড বন্ধ হওয়া (Missed Period):এটি গর্ভধারণের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক লক্ষণ।
- নিয়মিত পিরিয়ড বন্ধ হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে।
- বমি বা বমি ভাব (Morning Sickness):
- প্রায় ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে বমি বা বমি ভাব শুরু হতে পারে।
- এটি দিনের যেকোনো সময়ে হতে পারে, যদিও সাধারণত সকালে বেশি দেখা যায়।
- হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে এটি ঘটে।
- স্তনের পরিবর্তন:
- স্তন ফোলাভাব, সংবেদনশীলতা, ব্যথা বা নরম অনুভূতি হতে পারে।
- নিপলের চারপাশের রঙ গাঢ় হয়ে যেতে পারে।
- ক্লান্তি বা শক্তিহীনতা:
- গর্ভধারণের প্রথম দিকের হরমোনাল পরিবর্তন শরীরকে ক্লান্ত করে তুলতে পারে।
- প্রোজেস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধির কারণে এটি হয়।
- মেজাজ পরিবর্তন:
- হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মেজাজে হঠাৎ পরিবর্তন হতে পারে।
- আনন্দ, দুঃখ বা উত্তেজনা একসাথে অনুভূত হতে পারে।
- মূত্রত্যাগের পরিমাণ বৃদ্ধি:
- প্রায় ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে মূত্রত্যাগের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
- শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং কিডনির কার্যক্রমের ফলে এটি ঘটে।
- ক্ষুধার পরিবর্তন:
-
- কিছু নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি আকর্ষণ (cravings) বা অপছন্দ (food aversion) দেখা দিতে পারে।
- গন্ধের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা হতে পারে।
- মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা:
- রক্তচাপ কমে যাওয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা কমার কারণে মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা অনুভব হতে পারে।
- পেটের হালকা ব্যথা বা ক্র্যাম্প:
- গর্ভাশয়ে ডিম স্থাপন করার সময় হালকা ব্যথা বা টান অনুভূত হতে পারে।
- এটি মাসিকের ব্যথার মতো হলেও কম তীব্র হয়।
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি:
- বেসাল বডি টেম্পারেচার (BBT) গর্ভধারণের প্রথম দিকে কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- হালকা রক্তপাত বা স্পটিং:
- গর্ভধারণের প্রাথমিক অবস্থায় ডিম্বাণু গর্ভাশয়ে স্থাপন করার সময় হালকা রক্তপাত হতে পারে (implantation bleeding)।
সহবাসের পর কী করবেন?
- গর্ভধারণ পরীক্ষা:
সহবাসের ১০-১৪ দিন পর ঘরে বসেই প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করতে পারেন। এটি সহজ এবং নির্ভুল ফলাফল দেয়। - ডাক্তার দেখানো:
যদি গর্ভধারণের লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়, তবে দ্রুত একজন গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। - সুস্থ জীবনযাপন:
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, এবং মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
সহবাসের কতদিন পর বমি হয় বা বমি ভাব সাধারণত গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। তবে এটি সবসময় গর্ভধারণের কারণে হয় না।
যদি বমি বা অসুস্থতা স্থায়ী হয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সহবাসের পূর্বে দোয়া:
ইসলামে সহবাসের পূর্বে দোয়া পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি শুধুমাত্র ইবাদতের অংশ নয়, বরং এতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয় এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। সহবাসের আগে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা সুন্নত:
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ:
“বিসমিল্লাহ, আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাযাকতানা।”অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ, আমাদের শয়তানের থেকে দূরে রাখুন এবং আপনি আমাদের যে সন্তান দান করবেন, তাকে শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করুন।