পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় এবং ঔষধের নাম ও 5টি ঘরোয়া উপায়

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় এবং ঔষধের নাম ও ঘরোয়া উপায় নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই আর্টিকেল। যদিও এটি একটি নারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই দেরি না করে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুবেন কারণ এটি আপনার অনেক কাজে দিবে।

পিরিয়ডের সময় ব্যথা (ডিসমেনোরিয়া) অনেক নারীর জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এটি প্রধানত জরায়ুর পেশির সংকোচনের কারণে হয়। ব্যথা কমানোর জন্য নিচে ওষুধ, ঘরোয়া পদ্ধতি, এবং জীবনধারার পরিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো।

পিরিয়ড কী? কেন হয়?

পিরিয়ড হলো জরায়ুর (uterus) আস্তরণ থেকে রক্ত এবং টিস্যু বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এটি প্রতি মাসে একবার ঘটে, যদি গর্ভধারণ না হয়। পিরিয়ড (Menstruation) হলো একটি প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা নারীদের প্রজনন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সাধারণত একটি মেয়ের বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty) শুরু হওয়ার পর থেকে মেনোপজ (Menopause) পর্যন্ত প্রতি মাসে ঘটে।

পিরিয়ডের মূল কারণ হলো নারীর শরীরের প্রজনন চক্রের স্বাভাবিক কাজ। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে:

  1. ডিম্বাণু উৎপাদন (Ovulation): প্রতি মাসে নারীর ডিম্বাশয় (ovary) থেকে একটি ডিম্বাণু নির্গত হয়।
  2. জরায়ুর আস্তরণ তৈরি: ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার জন্য জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ (endometrium) পুরু এবং রক্তনালীসমৃদ্ধ হয়, যাতে ভ্রূণ সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
  3. নিষিক্ত না হলে: যদি ডিম্বাণু পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত না হয়, তবে শরীর জরায়ুর সেই আস্তরণকে আর ধরে রাখে না।
  4. আস্তরণ বেরিয়ে যায়: জরায়ুর সেই বাড়তি আস্তরণ রক্ত এবং টিস্যু আকারে যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এটিই পিরিয়ড।

∴  মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় জানতে ক্লিক করুন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

পিরিয়ডের ব্যথা সকল নারীর হয় না। এই ব্যথা যদিও তেমন খারাপ লক্ষণ নয় তবুও এটি সহ্য করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তার জন্যই নিচে এই ব্যথা দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় বলবো সেগুলো নিয়ম অনুসরণ করলে এই ব্যথা হতে মুক্তি পাবেন ইনশা আল্লাহ্। তাছাড়াও এই ব্যথা দূর করার কিছু ঔষধ রয়েছে যা সেবন করে উপকৃত হতে পারেন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধের নাম

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ গুলো তিন ধাপে বলা হয়েছে। সেখান থেকে আপনি আপনার উপযুক্ত ঔষধ টি বেচে সেবন করে দেখতে পারেন।

১। পেইন রিলিভার (NSAIDs):

এই ওষুধগুলো প্রোস্টাগ্লান্ডিন হ্রাস করে ব্যথা কমায়। এই ওষুধগুলো খালি পেটে না খাওয়া ভালো। তবে সবচেয়ে ভালো হয় প্যারাসিটামল গুপের ঔষধ সেবন করলে। কারণ এর পার্শ্বপ্রক্রিয়া একটু বেশি যদিও সকল ঔষধের মতো নিরাপদ।

  1. ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen):
    • ব্র্যান্ড: Brufen, Advil, Motrin
    • ডোজ: প্রতি ৬-৮ ঘণ্টায় ২০০-৪০০ মিগ্রা (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
  2. নাপ্রোক্সেন (Naproxen):
    • ব্র্যান্ড: Naprosyn, Aleve
    • ডোজ: প্রতি ৮-১২ ঘণ্টায় ২৫০-৫০০ মিগ্রা। (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
  3. মেফেনামিক অ্যাসিড (Mefenamic Acid):
    • ব্র্যান্ড: Ponstan
    • ডোজ: প্রতিবার খাবারের পর ২৫০-৫০০ মিগ্রা। (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।

২। প্যারাসিটামল (Paracetamol):

  • ব্র্যান্ড: Napa, Tylenol
  • ডোজ: ৫০০-১০০০ মিগ্রা, দিনে সর্বোচ্চ ৪ বার।
  • এটি হালকা থেকে মাঝারি ব্যথায় কার্যকর।

৩। এন্টিস্পাসমোডিক ওষুধ:

মাংসপেশীর খিঁচুনি কমানোর জন্য কার্যকর।

  • ড্রটাভেরিন (Drotaverine):
    • ব্র্যান্ড: Drotin, Spasmex
    • ডোজ: ৪০ মিগ্রা প্রতি ৮ ঘণ্টায়।

৪। হরমোনাল চিকিৎসা:

যদি পিরিয়ডের ব্যথা নিয়মিত হয় এবং ওষুধ কাজ না করে, হরমোনাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল কার্যকর হতে পারে।

  1. Combined Oral Contraceptive Pills (COCPs):
    • উদাহরণ: Yasmin, Microgynon
    • এগুলো হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং ব্যথা কমায়।
  2. প্রজেস্টেরন থেরাপি:
    • শুধু প্রজেস্টেরন সমৃদ্ধ ইনজেকশন বা পিল ব্যবহার করা যেতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি

ঔষধ ছাড়াও অনেক প্রাকৃতিক পদ্ধতি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাই আমার মতে যদি আপনার বেশি সমস্যা না হয় তাহলে শুরুতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে দেখতে পারেন। ইনশা আল্লাহ্ আপনার ব্যথা দূর হবে। প্রাকৃতিক ভাবে সবকিছুর সমাধান সম্ভব শুধু আমাদের চেষ্টার প্রয়োজন। নিচে কিছু নিয়ম দেওয়া হলো তা ফলো করুন।

∴  চুল গজানোর তেলের নাম ও সেরা ১০টি কার্যকরী সমাধান জানতে ক্লিক করুন

হট ওয়াটার ব্যাগ:

  • পেটের নিচের অংশে গরম পানির ব্যাগ ১০-১৫ মিনিট রাখুন। এটি রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে পেশির খিঁচুনি কমায়।

ভেষজ পানীয়:

  1. আদা চা:
    • আদা পানিতে ফুটিয়ে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন। এটি প্রদাহ কমায়।
  2. দারুচিনি চা:
    • দারুচিনি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে।

তেল ম্যাসাজ:

  • অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল পেটে আলতো করে ম্যাসাজ করলে ব্যথা কমতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম:

  • হালকা যোগব্যায়াম বা পায়ে স্ট্রেচিং করলে পিরিয়ডের সময় আরাম পাওয়া যায়।
  • পিরিয়ড চলাকালীন “Child’s Pose” বা “Cat-Cow Pose” চেষ্টা করুন।
  • মুসলিম হলে পিরিয়ড শেষ হলে ৫ ওয়াক্ত নামজ পড়ুন।

খাবারের অভ্যাস:

  1. পানি পান করুন: ডিহাইড্রেশন দূর করতে বেশি পানি পান করুন।
  2. পুষ্টিকর খাবার:
    • ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (বাদাম, কলা, দই)।
    • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার (মাছ, চিয়া সিড)।

জীবনধারার পরিবর্তন

  1. পর্যাপ্ত ঘুম:
    • প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
  2. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:
    • ধ্যান বা রিল্যাক্সেশন টেকনিক চর্চা করুন।
  3. ধূমপান বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন:
    • এগুলো ব্যথা বাড়াতে পারে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

যদি নিচের কোনো উপসর্গ থাকে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব গাইনোকোলজিস্ট ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ এসকল বিষয়ে অলসতা মুঠেও কাম্য নয়।

  • ব্যথা খুব তীব্র এবং ঔষধে কমছে না।
  • পিরিয়ডের রক্তক্ষরণ অস্বাভাবিক বেশি।
  • বমি বা মাথা ঘোরা।
  • দীর্ঘদিন ধরে একই সমস্যায় ভুগছেন।

পিরিয়ডের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা এবং এটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া, যা প্রতিটি নারীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top