লো প্রেসার হলে করণীয় কী? — এই প্রশ্নটি অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যাদের হঠাৎ মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
লো প্রেসার হলে করণীয় কী? জানুন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ৭টি উপায়:
লো প্রেসার (Low Blood Pressure), চিকিৎসা ভাষায় যাকে বলা হয় Hypotension, এটি তখনই হয় যখন রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার (প্রায় ৯০/৬০ mmHg এর নিচে) চেয়ে কমে যায়।
এই অবস্থায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, বিশেষ করে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত রক্ত পায় না, ফলে দেখা দেয় নানা উপসর্গ।
লো প্রেসারের সাধারণ লক্ষণসমূহ:
কিভাবে বুঝবেন আপনার ব্লাড প্রেসার কমে গেছে এর জন্য অনেক সাধারণ লক্ষণ দেখা দেয়।
নিচে লো প্রেসার হলে করণীয় কী হলে শরীরে কি কি লক্ষণ দেখা দেয় তা উল্লেখ করা হলো:
- মাথা ঘোরা
- শরীর দুর্বল লাগা
- চোখে ঝাপসা দেখা
- বমি বমি ভাব আসা
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- বুক ধড়ফড় করা
- হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
যখন দেখবেন উপরের এই লক্ষণ তাৎক্ষণিকভাবে যত দ্রুত সম্ভব আপনার ব্লাড প্রেসার চেক করে উপযুক্ত প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।
ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি সাথে সাথে আপনার লো প্রেসার কন্ট্রোল করতে পারবেন।
লো প্রেসার হলে করণীয় কী : ৭টি ঘরোয়া উপায়:
যদি ঘরোয়া উপায়ে জানতে চান যে লো প্রেসার হলে করণীয় কী? তাহলে নিচের কথা গুলা মন দিয়ে পড়ুন।
নিচের দেওয়া ৭টি ঘরোয়া উপায় মেনে চললে খুব সহজেই ইন শা আল্লাহ উপকারে আসবে।
1. সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন: হাত ও পা একটু উঁচু করে শোবেন যেন মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছাতে সুবিধা হয়।
2. লবণ পানি পান করুন: এক গ্লাস পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে খেলে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
3. মিষ্টি বা গ্লুকোজ পান করুন: চিনি বা গ্লুকোজ দ্রবণ পান করলে শরীর দ্রুত এনার্জি ফিরে পায়।
4. ফিটকিরি বা নুন দেওয়া লেবুর শরবত: ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখতে সহায়ক।
5. হালকা কিছু খেয়ে নিন: খালি পেটে থাকলে প্রেসার আরও কমে যেতে পারে। বিস্কুট বা ফল খেতে পারেন।
6. দ্রুত বসে বা দাঁড়াবেন না: আচমকা উঠলে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন, তাই ধীরে ধীরে অবস্থান বদলান।
7. প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন: যদি লো প্রেসার ঘন ঘন হয় বা অতিরিক্ত দুর্বলতা আসে, দ্রুত ডাক্তার দেখান।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
লো প্রেসার হলে করণীয় কী কখনো অবহেলা করার বিষয় নয়। আপনারা যারা লো প্রেসারে নিয়মিত ভোগেন তাদের মধ্যে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখা দিলে অতি সত্তর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যেমন:
- রক্তচাপ ৮০/৫০ mmHg এর নিচে চলে গেলে
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে
- বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট থাকলে
- নিয়মিত প্রেসার কম থাকলে
কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকুন:
আপনি যদি লো প্রেসার এর একজন নিয়মিত রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয় সতর্ক থাকা উচিত।
এতে করে আপনার শরীর স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকবে। যেমন:
অতিরিক্ত কফি বা চা না খাওয়া: আশাকরি এটা অবগত আছেন যে, চা-কফিতে অতিরিক্ত ক্যাফেইন থাকে,যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানোর কারণে ব্লাড প্রেসার লো হয়ে থাকে।
হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ না করা: রেগুলার যদি প্রেসার এর ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলে একজন রেজিস্ট্রার চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করে দিলে ব্লাড প্রেসার লো হতে পারে।
দীর্ঘসময় খালি পেটে না থাকা: আমরা অনেক সময় খাবারের অনেক অনিয়ম করে থাকি। কখনো কখনো কাজের চাপে দীর্ঘসময় না খেয়ে কাজ করি,পেট দীর্ঘ সময় খালি থাকলে ব্লাড প্রেসার লো হয়।
অতিরিক্ত গরম পরিবেশে না থাকা: অতিরিক্ত গরম এর মধ্যে থাকার ফলে আমাদের শরীর থেকে ঘাম বের হয় যার কারণে শরীরের পানি শূন্যতা দেখা দিয়ে প্রেসার লো হতে পারে।
লো প্রেসার হলে কি হার্ট অ্যাটাক হয়? জানতে ক্লিক করুন…
সর্বশেষ পরামর্শ:
ইতি মধ্যে আশা করি জেনে গেছেন যে লো প্রেসার হলে করণীয় কী সেই সম্পর্কে , তারপরও সর্বশেষ যে পরামর্শ টি বলবো সেটা হলো, কোনো সাধারণ অবহেলার বিষয় নয়।
ভুলেও কখনো অলসতা করবেন না নয়তো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
সময়মতো ব্যবস্থা নিলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায় এবং জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
তাই হালকা উপসর্গ দেখা দিলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
👉আপনারা চাইলে ঘরে বসে কিভাবে ডাক্তার দেখাতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করে পড়ে আসুন।
আপনার ঘরে যদি বৃদ্ধ বাবা-মা থাকেন তাহলে আপনার উচিত একটি ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিন কিনে নেওয়া।
এতে আপনারা শরীরের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে প্রেসার চেক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।