গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় কয়েকটি কার্যকর টিপস ও প্রাকৃতিক সমাধান নিয়ে সাজানো এই আর্টিকেল হয়তো আপনার ৫ মিনিট নষ্ট হবে কিন্তু মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার অনেক উপকার হবে ইনশা আল্লাহ্।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যাটি আমাদের আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। গ্যাস্ট্রিক এর কারণে আমরা অনেকে অনেক খাদ্য ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের অনেক পছন্দের খাদ্য চোখের সামনে থাকলেও আমরা খেতে পারি না কারণ আমাদের গ্যাস্ট্রিকে সমস্যা করে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়: কার্যকর টিপস ও প্রাকৃতিক সমাধান
গ্যাস্ট্রিক সমস্যাটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি সাধারণ সমস্যা। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিচে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গ্যাস্ট্রিক বাড়লে আমাদের শরীরের যে সমস্যা গুলো করে তাদের মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে পেট ব্যথা,বুক ব্যথা,বমি বমি ভাব,পেট জ্বালাপোড়া করা। নিচে এই সকল সমস্যার কারণ,দূর করার উপায় ও কয়েকটি ঔষধের নাম বলা হয়েছে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণ
গ্যাস্ট্রিক সমস্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ভাজা-পোড়া খাবার, ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ: স্ট্রেস হরমোন হজম প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- অনিয়মিত খাবার খাওয়া: সময়মতো খাবার না খাওয়া বা একবারে অনেক বেশি খাওয়া।
- অতিরিক্ত চা বা কফি পান: এতে থাকা ক্যাফেইন গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল: এগুলো হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত করে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
নিয়ম মানলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কোনো সমস্যাই না। আর এটি কোনো রোগ নয়। তবে এর বিপরীতে গেলে আপনাকে আলসার এর মতো রোগে ভুগতে হবে। কাজেই গ্যাস্ট্রিক আপনার নিত্যদিনে সঙ্গী হবার আগেই শেষ করে দিতে হবে। আপনি যদি সারা দিন গ্যাস্ট্রিক তৈরির মতো খাবার খান তার পরও আপনাকে গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় পড়তে হবে না যদি আপনি রুলস ফলো করেন।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা তৈরি করার মূল কারণ হচ্ছে পানি কম গ্রহন করা। আপনি যদি ৮ গ্লাসের বেশি পানি খান তাহলে আমি বিশ্বাস করি যে আপনার গ্যাস্ট্রিক নামক কোনো ঝামেলাই আপনাকে ভুগতে হবে না। আপনার যদি প্রশ্ন থাকে যে ভাই তো নিয়মিত অনেক বেশি পানি খাই তারপরও গ্যাস্ট্রিক আমায় ছাড়ছে না, তাহলে আমি বলবো আপনার পানি তেই গ্যাস্ট্রিক। কিভাবে? তা নিচে বর্ণনা করছি।
যদি পানিতে আর্সেনিক (Arsenic) উপস্থিত থাকে, তাহলে এটি শুধু গ্যাস্ট্রিক নয়, বরং পুরো শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আর্সেনিক-দূষিত পানি পান করলে পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রাকৃতিক কার্যকলাপে সমস্যা হতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আর্সেনিকযুক্ত পানির কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণ:
- হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত:
আর্সেনিক পাকস্থলীর লাইনিং বা আস্তরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা হজমে সমস্যা ও অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়ায়। - অন্ত্রের প্রদাহ:
আর্সেনিক অন্ত্রের কোষে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে। - অম্লতার বৃদ্ধি:
আর্সেনিক পাকস্থলীতে অ্যাসিডের নিঃসরণ প্রভাবিত করে, ফলে অতিরিক্ত অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। - দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব:
দীর্ঘমেয়াদি আর্সেনিক গ্রহণ হজম প্রক্রিয়াকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয় এবং আলসার বা পাকস্থলীর অন্যান্য জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
১. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
- সুষম খাবার গ্রহণ: পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার খান। ভাত, সেদ্ধ সবজি, ডাল ইত্যাদি গ্যাস্ট্রিকের জন্য উপকারী।
- ঝাল-মশলা এড়িয়ে চলুন: ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে পারে।
- পর্যাপ্ত পানি পান: হজম প্রক্রিয়া সচল রাখতে দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
২. গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা
গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণে অনেক সময় পিঠে ব্যাথা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা কমানোর জন্য:
- সময়মতো খাবার খান এবং একবারে বেশি না খেয়ে ছোট ছোট করে খাবার খান।
- গরম পানির সেক দিতে পারেন ব্যথার স্থানটিতে।
- অ্যাসিডিটি কমানোর জন্য অ্যান্টাসিড নিতে পারেন, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
৩. গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা
গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- খাবার তালিকায় রাখুন:
- কলা, আপেল, পেঁপে
- ওটস, সেদ্ধ ডিম
- কম তেল-মশলাযুক্ত খাবার
- খাবার এড়িয়ে চলুন:
- ভাজা-পোড়া খাবার
- টমেটো, কফি, চা
৪. গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা
- পেটের মাঝখানে বা উপরিভাগে ব্যথা
- বুক জ্বালাপোড়া
- ক্ষুধামন্দা ও বমি বমি ভাব
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নাম
- অ্যান্টাসিড (Antacids)
- রেনিটিডিন (Ranitidine)
- ওমেপ্রাজল (Omeprazole)
- প্যান্টোপ্রাজল (Pantoprazole)
- এসোমেপ্রাজল (Esomeprazole)
- ল্যান্সোপ্রাজল (Lansoprazole)
- প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI)
- রাবেপ্রাজল (Rabeprazole)
- ডেক্সল্যান্সোপ্রাজল (Dexlansoprazole)
- এইচ2 রিসেপ্টর ব্লকার (H2 Receptor Blockers)
- ফ্যামোটিডিন (Famotidine)
- সিমেটিডিন (Cimetidine)
- গ্যাস্ট্রিক মুভমেন্ট রেগুলেটর
- ডোমপেরিডন (Domperidone)
- মেটোক্লোপ্রামাইড (Metoclopramide)
- গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধকারী ওষুধ
- সুক্রালফেট (Sucralfate)
- মিসোপ্রোস্টল (Misoprostol)
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে প্রাকৃতিক উপাদান ভিত্তিক পণ্য:
- ইসুবগুলের ভুসি
- আদা ট্যাবলেট
- পেপpermint অয়েল ক্যাপসুল
- প্রয়োজনের বেশি পানি খাওয়া।
- সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- ওমেপ্রাজল বা র্যানিটিডিনের মতো ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে আরাম পাওয়া যায়।
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন।
আপনি চাইলে অনলাইনেই ডাক্তার দেখাতে পারবেন মাত্র ২০ টাকা দিয়ে-বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন।
৫. গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দূর করার উপায়
- গরম পানি পান করুন: এতে অ্যাসিড নিঃসরণ কমে।
- আদা চা পান করুন: এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিন: বুকে ব্যথা গ্যাস্ট্রিক ছাড়াও অন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধে টিপস
- পানি: আপনার শরীরের প্রয়োজনের বেশি পানি পান করা।
- নিয়মিত খাবার খাওয়া: নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
- হালকা ব্যায়াম করুন।
- অতিরিক্ত চা-কফি পান করবেন না।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা একটি অস্বস্তিকর অবস্থা হলেও, সঠিক যত্ন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সমাধান এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে আপনি গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে দূরে রাখতে পারবেন।