কাঠ বাদাম এর উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিম নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সম্পূর্ণ ভালো ভাবে পড়ুন।
কাঠ বাদাম (Almond) বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর বাদামের মধ্যে একটি। এই বাদাম শুধুই যে সুস্বাদু এ জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাদাম।
কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল।
যদিও এটি পুষ্টি গুনে ভরপুর তারপরও অতিরিক্ত গ্রহনে এর রয়েছে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব,
যদি আপনি নিয়মিত কাঠ বাদাম খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এর উভয় দিক জানা জরুরি।
কাজেই আমরা কাঠ বাদামের উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
কাঠ বাদাম এর উপকারিতা কি কি
কাঠ বাদাম এর উপকারিতা রয়েছে অসংখ্য। যদি আমরা নিয়ম মেনে নিয়মিত কাঠ বাদাম খাই তাহলে এই পুষ্টি গুন আমরা ভোগ করতে পারবো।
খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঠ বাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে।
১. হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
কাঠ বাদাম এর উপকারিতা রয়েছে স্বাস্থ্যকর মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
যার ফলে হার্ট এট্রাক এর ঝুকি কমায়। এছাড়াও এটি হাই ব্লাড প্রেশার কমাতেও ভূমিকা রাখে। তাই আমরা যারা হার্ট ও হাই ব্লাড প্রেশারের রুগী আমাদের জন্য কাঠ বাদাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার।
২. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
এতে রয়েছে ভিটামিন E ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কের নিউরনের কার্যকারিতা বাড়ায়। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।
যারা অল্পতেই সব কিছু ভুলে যায় তাদের জন্য কাঠ বাদাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এটি আলঝেইমার প্রতিরোধেও সহায়ক।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
কাঠ বাদামে থাকা প্রোটিন ও ফাইবার ক্ষুধা কমায়, ফলে এটি দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে। যার কারণে আমাদের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে না ফলে আমাদের শরীরের। ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
কাঠ বাদামের ভিটামিন E ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সহায়ক।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
কাঠ বাদামে লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
তবে সকল ডায়বেটিস রুগীর জন্য এটি নিরাপদ নয়। শুধু মাত্র টাইপ-২ এর অন্তর্ভুক্ত যারা তাদের জন্যই উপকারী।
আপনি যদি টাইপ-২ ডায়াবেটিস সম্পর্কে না জানেন তাহলে ক্লিক করে জেনে আসতে পারেন।
৬. হাড়ের গঠন মজবুত করে
এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা হাড়কে মজবুত করতে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৭. পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো
কাঠ বাদামের ফাইবার হজমের গতি উন্নত করে এবং কব্জ (কোষ্ঠকাঠিন্য) প্রতিরোধ করে।
কাঠ বাদামের কিছু ক্ষতিকর দিক
সব কিছুরই দুইটা দিক থাকে সেটা আমাদের মাথায় অবশ্যই রাখতে হবে। ঠিক তেমনি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা এর পাশাপাশি অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খেলে আমাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
কাজেই কাঠ বাদাম এর উপকারিতা ভেবে অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খাওয়া মুঠেও উচিত নয় আর খেলে কি হয় তা আমাদের জানা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
১. অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ করে
কাঠ বাদাম ক্যালোরিতে সমৃদ্ধ একটি খাবার। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বাড়তে পারে, যা স্থূলতার কারণ হতে পারে। কাজেই কাঠ বাদাম এর উপকারিতা এখানে কাজে আসবে না
২. এলার্জির কারণ হতে পারে
অনেকেরই বাদামে অ্যালার্জি থাকে। কাঠ বাদাম খেলে ত্বকে চুলকানি, ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট বা এনাফাইল্যাক্সিস (Anaphylaxis) হতে পারে।
৩. কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
এতে উচ্চ মাত্রার অক্সালেট থাকে, যা কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যারা আগে থেকেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত ফাইবার ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে
বেশি কাঠ বাদাম খেলে অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।
৫. ব্লাড শুগার মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে দিতে পারে
যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ কাঠ বাদাম রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) ঘটাতে পারে।
কাঠ বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কাঠ বাদাম (আলমন্ড) খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন, যেমন পরিমাণ, ভিজিয়ে খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা, এবং কখন খাওয়া উচিত।
১. ভিজিয়ে খাওয়া ভালো নাকি শুকনো?
- কাঠ বাদাম ভিজিয়ে খেলে হজম ভালো হয় এবং এতে থাকা এনজাইম ইনহিবিটর (যা হজম বাধাগ্রস্ত করতে পারে) দূর হয়।
- রাতে ৬-৮টি কাঠ বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো।
২. প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত?
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৬-১০টি কাঠ বাদাম যথেষ্ট।
- বেশি খেলে ওজন বাড়তে পারে, কারণ এতে ক্যালোরি ও ফ্যাট বেশি থাকে।
৩. কখন খাওয়া ভালো?
- সকালে খালি পেটে খেলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে এবং দীর্ঘক্ষণ এনার্জি পাওয়া যায়।
- স্ন্যাকস হিসেবে দুপুরের দিকে খাওয়া যেতে পারে, যা ক্ষুধা কমায় এবং শক্তি জোগায়।
- রাতে খাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এতে থাকা ফ্যাট ও প্রোটিন রাতে হজম হতে সময় নিতে পারে।
আপনার যদি নির্দিষ্ট কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, যেমন অ্যাসিডিটি বা ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাঠ বাদাম খাওয়াই ভালো।
কাঠ বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হলেও অতিরিক্ত খেলে ক্ষতির কারণ হতে পারে। পরিমাণমতো খেলে এটি হার্ট, মস্তিষ্ক, ত্বক ও হাড়ের জন্য দারুণ উপকারী।
তবে যারা বাদামে অ্যালার্জি বা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের সতর্ক থাকা উচিত।
আপনারা যদি ভালো মানের কাঠবাদাম ক্রয় করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনারা Ghorerbazar থেকে ক্রয় করতে পারেন।
কাঠ বাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে আপনি আগে কতটুকু জানতেন? আপনি কি নিয়মিত কাঠ বাদাম খান? আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের কমেন্টে জানান!